সেফগার্ডিং বলতে আমরা কী বুঝি?

সাধারণভাবে সেফগার্ডিং অর্থ হল উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের সময় মানুষের এবং পরিবেশের ক্ষতি প্রতিরোধ করা। 

ত্রাণ কর্মসূচীর কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবে স্থানীয় জনগণের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সেটা প্রায় সকলেই জানেন। বিশেষত এসইএএইচ (যৌন শোষণ, নির্যাতন ও যৌন হয়রানি) বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং নথিভুক্ত । ত্রাণ সংস্থাগুলোর বেশিরভাগ কর্মী এবং সহযোগীরা অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ন্যায়নিষ্ঠ হলেও, তাদের মধ্যে কিছুজনের অসদাচরণের কারণে স্থানীয় জনগণের, বিশেষত ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোর ক্ষতির ঝুঁকি সবসময় থেকে যায়। একইভাবে, কর্মী এবং সহযোগীরাও কর্মক্ষেত্রে তাদের সহকর্মীদের কর্তৃক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। 

রিসোর্স এন্ড সাপোর্ট হাবের (আরএসএইচ) সুচিন্তিত পরিকল্পনায় এসইএএইচ প্রতিরোধ এবং তাতে সাড়াদানের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে, কারণ এই ধরণের কাজের মাধ্যমে সবচেয়ে অসহায়/ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের প্রতি গুরুতর অপরাধের নজির অনেক বেশি। শক্তিশালী সেফগার্ডিং নীতি এবং এর অনুশীলন আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও উন্নয়ন সেক্টরের প্রতি জনগণের আস্থা জোরদার এবং এর প্রতি বিদ্যমান সমর্থন অক্ষুণ্ণ রাখা নিশ্চিত করবে। 

সংজ্ঞা

হাবের প্রেক্ষিতে সেফগার্ডিং এর অর্থ হল যৌন শোষণ, নির্যাতন ও যৌন হয়রানি এবং অন্যান্য ধরনের ক্ষতি (এসইএএইচ) প্রতিরোধ করতে সকল ধরণের যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ গ্রহণ করা; মানুষকে, বিশেষত ঝুঁকিতে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের সেই ক্ষতি থেকে রক্ষা করা; এবং ক্ষতি সংঘটিত হলে তার জন্য যথাযথভাবে সাড়া প্রদান করা।[১]

এই হাবে সংশ্লিষ্ট ধারণাগুলির জন্য নিম্নলিখিত আন্তর্জাতিক সংজ্ঞাসমূহ, বিশেষত জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত সংজ্ঞাসমূহ ব্যবহার করা হয়েছে:

এসইএএইচ এর সংজ্ঞা:

  • যৌন শোষণ: যৌন উদ্দেশ্যে মানুষের অসহায় অবস্থা, ক্ষমতার বৈষম্য অথবা আস্থার সুযোগ নেওয়া অথবা নেওয়ার চেষ্টা করা। আর্থিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক লাভের জন্য কোনও ব্যক্তিকে যৌন শোষণ করাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী লেনদেনমূলক যৌনতা, লেনদেনমূলক যৌনতার অনুরোধ এবং শোষণমূলক সম্পর্কও এর অন্তর্ভুক্ত।[২]
  • যৌন নির্যাতন: বলপ্রয়োগ করে অথবা অসম বা বাধ্যতামূলক পরিবেশে কারো প্রতি যৌন প্রকৃতির শারীরিক উৎপীড়ন করা বা তার হুমকি দেওয়া। যৌন আক্রমণ (ধর্ষণের চেষ্টা, চুম্বন/স্পর্শ, কোনও ব্যক্তিকে ওরাল সেক্স/স্পর্শ করতে বাধ্য করা) এবং ধর্ষণও এর অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে সাবালক হওয়া বা সম্মতি দানের বয়স যাই হোক না কেন, ১৮ বছরের কম বয়সী যেকোনো ব্যক্তির সাথে সকল ধরণের যৌন কার্যকলাপকে যৌন নির্যাতন বলে গণ্য করা হবে শিশুর বয়স সম্পর্কে ভুল ধারণা যুক্তি হিসেবে গণ্য করা হবে না।[৩]
  • যৌন হয়রানি: যৌন প্রকৃতির অনুচিত ও অবাঞ্ছিত আচরণ এবং অনুশীলন যার কিছু উদাহরণ হল (কিন্তু এতেই সীমাবদ্ধ নয়) যৌন ইঙ্গিত বা দাবি, যৌন অনুগ্রহের অনুরোধ এবং যৌন, মৌখিক বা শারীরিক আচরণ বা অঙ্গভঙ্গি যা যুক্তিসঙ্গতভাবে আপত্তিকর বা অপমানজনক বলে মনে করা হতে পারে।[৪]

জাতিসংঘের মহাসচিবের বুলেটিনে (যৌন শোষণ এবং যৌন নির্যাতন থেকে সুরক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা) উল্লিখিত বিধানগুলির লঙ্ঘন যৌন শোষণ ও নির্যাতন (এসইএ) বলে বিবেচিত হয় এবং এটা হল "যৌন প্রকৃতির আচরণ বা ব্যবহার যা ST/SGB/2003/13 অনুযায়ী যৌন শোষণ বা যৌন নির্যাতন হিসেবে বিবেচিত"।[৫]

যৌন শোষণ এবং নির্যাতন থেকে সুরক্ষা (পিএসইএ) কথাটি জাতিসংঘ এবং নাগরিক সমাজ তাদের কর্মী এবং সহযোগী সংস্থার কর্মী কর্তৃক সংঘটিত যৌন শোষণ এবং নির্যাতন থেকে মানুষদের রক্ষার জন্য গৃহীত ব্যবস্থাগুলি বোঝাতে ব্যবহার করে।[৬]

অনেক ত্রাণ সংস্থা এখন এসইএ-র পরিবর্তে এসইএএইচ মোকাবেলা করার ব্যাপারে আলোচনা করে, কারণ স্পষ্টতই হয়রানিকে একটা সংশ্লিষ্ট সমস্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যৌন শোষণ ও নির্যাতন এবং যৌন হয়রানির কাঠামোগত কারণগুলি যে একই ধরণের অসমতা থেকে উদ্ভূত হয় তার ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতির কারণেই এটা সম্ভবপর হয়েছে। সেফগার্ডিং লঙ্ঘন বিভিন্ন রূপ নিতে পারে, যেমন যৌন, শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক এবং মৌখিক নির্যাতন। এই সমস্যাগুলির মোকাবেলা কিছুটা পৃথকভাবে করা হলেও এর সবগুলোই সেফগার্ডিং সম্পর্কিত সমস্যা এবং এদের মূলে রয়েছে ক্ষমতার বৈষম্য, অসমতা - বিশেষত জেন্ডার অসমতা - জাতি, জাতিগোষ্ঠী, ধর্ম, যৌন অভিমুখিতা, প্রতিবন্ধীতা, অর্থনৈতিক এবং মর্যাদা ও পরিচয়ের অন্যান্য বিষয়ের ভিত্তিতে পক্ষপাত, বিশেষ সুযোগসুবিধা পাওয়া ও বৈষম্য।

এই অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলির সংবেদনশীল পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা এবং শক্তিশালী সেফগার্ডিং নীতি ও এর অনুশীলনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে একটি সার্বিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা প্রয়োজন যাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি উন্নত করার প্রতি নজর দেওয়া হয়। এর জন্য শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রয়োজন যারা সম্মান, মর্যাদা এবং অন্তর্ভুক্তির উপর গুরুত্ব প্রদান করবেন। আমরা আশা করি যে এই সাইটের উপকরণগুলি এসইএএইচ এবং বৃহত্তর সেফগার্ডিং সংক্রান্ত সমস্যাগুলির মোকাবেলা করতে এবং ত্রাণ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলিতে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সমস্ত ধরণের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে৷

রিসোর্স এবং সাপোর্ট হাব (আরএসএইচ) এর সেফগার্ডিং জার্নি

আরএসএইচ (RSH) সেফগার্ডিং জার্নি-তে ব্যবহারকারীদের তথ্য, উপকরণ এবং হাবে প্রদর্শিত সেবার মাধ্যমে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। এটি চারটি স্তর নিয়ে গঠিত তবে সেগুলি ধারাবাহিক নয়। হাবের ব্যবহারকারীরা সেফগার্ডিং জার্নির যে পর্যায়ে রয়েছেন সেই অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে পারেন। ইংরেজিতে সেফগার্ডিং জার্নি দেখতে, এখানে ক্লিক করুন।

[১] আরএসএইচ (RSH) এর সেফগার্ডিং কার্যগত সংজ্ঞা

[২] জাতিসংঘের (২০১৭) যৌন শোষণ ও নির্যাতনের শব্দকোষ। দ্বিতীয় সংস্করণ।

[৩] একই তথ্যসূত্র।

[৪] জাতিসংঘের (২০১৮) নারী ও মেয়েদের প্রতি সব ধরনের সহিংসতা: যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নির্মূল করার প্রচেষ্টার দৃঢ়করণ (A/RES/73/148)। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব।

[৫] জাতিসংঘ, ২০১৭।

[৬] সিএইচএস অ্যালায়েন্স (২০১৭) পিএসইএ বাস্তবায়ন বিষয়ক সংক্ষিপ্ত রেফারেন্স হ্যান্ডবুক

বাংলাদেশ জাতীয় মূল্যায়ন

আরএসএইচ (RSH) দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হাবের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে বিবেচ্য বিষয়গুলি জানার উদ্দেশ্যে সেফগার্ডিং বিষয়ক জাতীয় মূল্যায়ন - বাংলাদেশ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের (সরকারিভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিশেবে পরিচিত) সেফগার্ডিং) বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

২০২২ সালের মার্চ এবং মে মাসের মধ্যে পরিচালিত এই জাতীয় মূল্যায়নে ডেস্ক-ভিত্তিক পর্যালোচনা থেকে প্রাপ্ত সেকেন্ডারি ডেটা, অনলাইন জরিপ, এবং নাগরিক সমাজ প্রতিষ্ঠান (সিএসও) ও মানবাধিকার বিষয়ক সরকারি বিভাগগুলির সাথে মূল তথ্যদাতার সাক্ষাৎকারের (KII) মাধ্যমে বাংলাদেশে সেফগার্ডিং এর বর্তমান পরিস্থিতি সম্যকভাবে জানার চেষ্টা করা হয়েছে। 

মূল্যায়ন থেকে প্রাপ্ত মূল তথ্য থেকে বোঝা যায় যে আরএসএইচ (RSH) এর বৃহত্তর ভৌগোলিক এলাকায় কর্মরত জাতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) পাশাপাশি ছোট স্থানীয় স্তরের এনজিও, বিশেষত যারা ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করছে, তাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। এই মূল্যায়নে বাংলাদেশের স্থানীয় নাগরিক সমাজ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বিবেচনা করে দেখা গেছে যে কর্মসূচির নিরাপদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের সক্ষমতায় গুরুতর ঘাটতি রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে কর্মীদের প্রশিক্ষিত করার জন্য দক্ষতা ও সম্পদের অভাব রয়েছে এবং সেফগার্ডিং বিষয়ক সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং কর্মসূচীর জন্য কমিউনিটি স্তরে সচেতনতা, অভিযোগ, তদন্ত ও রেফারেলের জন্য ব্যবস্থা গঠনের তহবিল ও সময়সীমা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত সংস্থান নেই।

ইংরেজিত সারসংক্ষেপ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন!

বাংলায় সারসংক্ষেপ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন!